"পরম চেতনার পথে কবিতা" ( লেখক অরুণ দাস )
বইটি সম্বন্ধে পাঠ প্রতিক্রিয়া।
চিত্রা ভট্টাচার্য্য
" পরম চেতনার পথে কবিতা ;'' লেখক কবি অরুণ দাস মহাশয়ের বই টি পড়ার পর বড়ো অবাক হয়েছি।আধুনিক কবিতা নিয়ে কবির এমন সূক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ও প্রকাশ , এমন নিগূঢ় তত্ত্ব বোধ এর আগে বিশেষ পড়িনি। কবির ভাষায় নব প্রজন্মের কবিদের কবিতা কে নিয়ে কেমন করে শিল্পের সুউচ্চ মার্গে পৌঁছোতে হবে ; বই টি তে আদ্যন্ত তারই প্রকাশ অনুভূত হলো। শিল্প সাহিত্য কাব্যের আঙিনায় প্রতিষ্ঠার জন্য একজন শিল্পীর মানসিক প্রস্তুতির নিপুন অনুশীলন ও বলা যায়। অক্ষর শিল্পীর কাব্য রাজ্যে নিজেকে উৎসর্গ করার এক মূল্যবান উপক্রমণিকা। কবি বললেন ,নব্য যুগের অক্ষর শিল্পীর কবিতা রচনা অভ্যাসে থাকবে নিবিড় প্রয়াস এবং কাব্যেই যাপন। একজন অতি সাধারণ পাঠক হয়ে ''এমন নিখুঁত কাব্য দর্শন নিয়ে লেখা বই টির , আলোচনায় কী লিখবো ? বা লেখার যোগ্যতা কত টুকু আমার আছে ? ভেবে পাই না।
আধুনিক কবিতায় প্রায় ই দেখি যে এলোমেলো শব্দ গুলো হঠাৎ মনে পড়েছে কবি তাকেই কথার জালে জড়িয়ে কবিতায় রাখলেন। বর্তমান যুগের কবিতার ভাষা বা কাব্য বোধ তেমন আবহ সৃষ্টি ,সুললিত ছন্দ ও শ্রবণ মাধুর্য বা শব্দের ঝঙ্কার ইত্যাদি পাঠক মনে অনুরণন বা তেমন সাড়া জাগায় না। কবি বললেন , কবিতা পাঠে'' চক্ষু কর্ণ জিহ্বার ভূমিকা সর্বশ্রেষ্ঠ। শ্রবণেন্দ্রিয়ের সক্রিয়তার বৃদ্ধি ঘটলে বর্ণ ও শব্দের অন্তর্নিহিত ধ্বনির গভীরতম ব্যাঞ্জনা সহজেই ধরা দেয়। বর্ণ , ধ্বনি ও শব্দের অনুভব মস্তিষ্ক ও হৃদয়ে সঞ্চারিত করে। '' এই প্রথম দেখলাম কবিতাকে মনোগ্রাহী করে পাঠকের দরবারে শ্রেষ্ঠ আসনে বসাতে গেলে তার পিছনে ও জটিল বিজ্ঞান রয়েছে। কবি অরুণ তার বই টিতে নিজেই এক গভীর দর্শন সূক্ষ্ণ অনুভূতির চড়াই উৎরাই ডিঙিয়ে বারংবার নানাভাবে শেখাতে চাইলেন সাহিত্যের তীর্থ ক্ষেত্রে আধুনিকতার মোড়কে মুড়িয়ে কবিতাকে ঐশ্বর্য্য মন্ডিত করে সরস্বতীর পাদপদ্মে স্থাপনা করতে হলে চাই স্রষ্টার সর্ব ইন্দ্রিয় দিয়ে কাব্য সুন্দরী কে অনুভব করে একাগ্র ভাবে অসীম সাধনা।
তিনি পরতে ,পরতে শিখিয়েছেন শিল্পীর ধমনীতে প্রবাহিত যে শৈল্পিক চেতনা বোধ রয়েছে ,সমস্ত সত্ত্বা দিয়ে তাতে সম্পূর্ণ অবগাহন করতে হবে। অভীষ্ট কে পেতে হলে সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে ঐকান্তিক লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে । নতুন যুগের স্রষ্টা কে বললেন মন প্রাণ সহ সকল ইন্দ্রিয় কে উৎসর্গ করো তোমার সৃষ্টির আকাঙ্খাতে । '' পরম চেতনার জ্ঞান কে উপলব্ধি করতে গেলে ইন্দ্রিয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য।'' চাই পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের গভীর নিয়ন্ত্রণের সাথে পরমচেতনার শিল্প সৃষ্টিতে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় মনের যোগের সমধিক প্রয়োজনীয়তা। দার্শনিক কবি স্মরণ করালেন মানব শরীরে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় মন I জ্ঞানেন্দ্রিয়, বুদ্ধি ,আত্মা এগুলো এক নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া অনুভবের বিভিন্ন অংশ মাত্র। মনের সাহায্যেই ইন্দ্রিয় সমূহ দ্বারা মানুষ বিভিন্ন বিষয় অনুভব করতে পারে। আবার মন অপেক্ষা বুদ্ধি শ্রেষ্ঠ। বুদ্ধি থেকে আত্মা শ্রেষ্ঠ। দেহের সব ইন্দ্রিয় জ্ঞান বুদ্ধি সবে মিলে কর্মের সাধন হয়।
হৃদয় স্পর্শী কবিতা লিখতে গেলে, কবিতা লেখার নিয়ম অনুসরণ না করলে কবিতা লেখা অনেক কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কবি অরুণ দাস মহাশয়ের ''পরমচেতনার পথে কবিতা '' বইটি পড়ে বারংবার বলতে চাই আধুনিক যুগের কবিদের কাব্য সৃষ্টির প্রেরণায় এই বইটি একটি মূল্যবান অভিধান। আগামী প্রজন্মের নব্য কথা শিল্পীদের কাছে সৃষ্টির দরজায় প্রবেশের আগে এই বইটি পথ প্রদর্শক। বাস্তবিকই এক নতুন পথের দিশারী হয়ে থাকবে ।